স্বপ্নের রাত

শরতের সকাল (আগষ্ট ২০২৩)

ওমর ফারক
মোট ভোট ২১ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৩.৮১
  • 0
  • ৮২
আমাদের সব স্বপ্ন নিভে গেল। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে নিমিষেই সব শেষ- ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে। আমিই জ্বলে ওঠা সব আগুন নিভিয়ে দিয়েছি , সমাজ- সংসার, শিক্ষকতা পেশাকে সমালোচনার বাইরে রাখতে। ঠিক-বেঠিক কী করেছি জানিনা, মনে হয় হত্যা করেছি ইভাকে, খুন হয়েছি আমি নিজেও। এ কৈফিয়তের উত্তর আমার জানা নেই, কেন জড়ালাম, এত আশায় বুক বাঁধল –স্বপ্ন সহযোগিতা খুঁজে পাওয়া এক অসহায় কারাবন্দি নারি। মোবাইলের সব অপশন তার জন্য বন্ধ, কেননা সে আমাকে পথে নামাতে চেয়েছে, নিজে ও নেমে যাচ্ছিল। ম্যাসেঞ্জার ডিলেট করেছি, ইমু বন্ধ করেছি, যে সিমটা দিয়ে তার সাথে কথা হত- মোবাইল থেকে খুলে রেখেছি, দুচার মাস গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। রাতে ইভার সাথে প্রাণ খুলে ইমুতে কথা বলে ঘুমালাম, ভোরের রুটিনটা সকাল নটায়। স্বপ্নের মত সব বদলে দিলাম- ---
আমাদের পরিচয়টা ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে, আকস্মিক। কোন এক শরতের বিকেলে কাশফুলের মাঝে দাঁড়িয়ে হাসিমাখা আমার একক ছবিটা সে ভুলতে পারেনা,তার কাছে অসাধারণ । তবে দুঃখ আছে তার, পাশে ইভা থাকলে ভাল লাগত। আমার সম্পর্কে ফেসবুকে অনেক তথ্য জেনেছে ইভা, আমি সেসব ভাবিনি। ম্যাসেজে লিখত- আমি ইভা, বাড়ি কুমিল্লা। তুমি কেমন আছ? ইমুতে কল ধরনা, মেসেজের রিপ্লাই দাওনা কেন? আমি কি কোন ভুল করেছি!
-না! আসলে সময় আমার কম, তাছাড়া তোমাকে চিনিনা , জানিনা।
- মানুষ কম সময় নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে, এর মাঝেই অচেনাকে চেনে। অবশ্য মন থাকা লাগে। প্লিজ, তোমার মোবাইল নম্বরটা দাও, খুব প্রয়োজনীয় কথা আছে, শুনলে পাপ হবেনা।
দিলাম, দেখি কী বলতে চায়। যে সিমটা কম ব্যবহার করি, সেটা দিলাম। রাত তখন দশটা, ছাদে আমি একা। আমরা তিনজন শিক্ষক থাকি, তারা অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়ে। কল এল- আসসালামু আলাইকুম, তুমি কেমন আছ?
-অয়ালাইকুম আসসালাম, ভালই আছি। তুমি ?
-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আমি ইভা, সুমাইয়া জাহান ইভা। বাড়ি কুমিল্লা শহর থেকে দশ কিলো দূরে। - আমি ফিরোজ, থাকি সাগরপাড়, বরগুনা। কল দিলা কেন?
কোন কথাই বলছেনা, শুধু ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ। একি জ্বালা, - কি হয়েছে তোমার ইভা ? কাঁদছ কেন এভাবে ?
-আমার কষ্টের কথা তোমাকে বলতে চাই, শুনতে চাওনা !
- আচ্ছা, শুনবো।
তাহলে ইমু নম্বর দাও , না দেখে কথা ভাল হয়না।
ইমু নম্বর দিলাম। আমি অপেক্ষা করছি। অনেক পরে কল এল। হয়ত নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি- নতুন অভিজ্ঞতা , নতুন স্বপ্নযাত্রা। নাকমুখ একটু ফোলা , কেঁদেছে এ জন্য। সেজেছে সাদাসিদে , কেন জানিনা । বেশ লাগছে, মুখে স্নিগ্ধ করুণ হাসি। মনে হচ্ছে, আমার সামনে এক অপরূপা নারি-যার জন্য পুরুষেরা পাগল। সালাম দিল, উত্তর দিলাম। আমি তার চোখে তাকিয়ে দেখছি, ইভাও দেখছে আমায় যেন তৃষ্ণার্ত। -ফিরোজ, দেখছো আমায়?
-অপরূপ, ভোলার মত নয়।
-তবুও ভুলে থাকে মানুষ, ভুলে যায়, সে কথা তোমাকে জানাবো। আজ না, মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে যাবে।
-তোমার মেয়ে আছে?
- হ্যা। ওর বয়স সাত বছর। বাবার স্পর্শ পায়নি। আমাদের বিয়ের তিন মাস পরই দুবাই চলে যায়, আসবো- আসছি করে আর ফেরেনি।
-ওখানে কি বিয়ে করেছে?
-জানিনা ।
- ভাল ইনকাম করছে, ভবিষ্যেতে সুখে থাকবা।
-টাকাটা তোমাকে দিলাম, সুখটা আমাকে দাও।
তুমি দিয়েই ওর সম্বোধন শুরু। যেন কত কালের চেনা , অবশ্যি এক জীবনে রুহ জগতে আমরা একত্রে ছিলাম, নাহয় আজ দেখা হত না। সেখানে কি মোবাইল ছিল, দেখা যাক সামনের দিনগুলো। কতদূর আমাদের পথচলা, সৃষ্টিকর্তা কি লিখে রেখেছেন, জানিনা।
পরদিন রাত এগোটায় কল এল,- কেমন আছ ফিরোজ ? অপেক্ষা করছিলে বুঝি?
ভাল আছি। তোমার কথা না শোনা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতেই হয়।
-কথা শেষ হলে আর কথা হবেনা !
জানিনা। এমন কঠিন প্রশ্ন? তবে মৃত্যুর আগে কথা বন্ধ হয়না।
খিলখিল করে হেসে ওঠে ইভা। শ্বশুর- শাশুড়িকে খাইয়ে, মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে এলাম, আজ সারারাত তোমার সাথে কথা বলবো, শুনবেনা ?
শুনতে তো হবেই।
জান ফিরোজ, আমার বুকে কত কথা, কত ব্যথা! বিয়ের তিন মাস পর স্বামি বিদেশে চলে গেল ,আজ সাত বছর। এই সুন্দর দেহের চাহিদা আছে, মনের চাহিদা আছে। সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক ,কথা বলার সংগি, মুক্ত বাতাসে হাত ধরাধরি করে চলার একজন বিপরিত মানুষ প্রয়োজন। আমাকে ভাল ভাবে দেখ ফিরোজ , আমি জীবিত, না মৃত! যে সোনার সম্পদ আমি নিয়ে এসেছি, তা পুড়ে ফেলার জন্য তোমার কাছে কৈফিয়ত চাইছি। ফুল ফোটে কি শুধু ঝরে পড়ার জন্য, চোখের আলো কি নিজেকে দেখার জন্য?
আমি আসামি হয়ে গেলাম- কী জবাব দেব?
জবাব তোমাকে দিতেই হবে, তুমি না পুরুষ?
ইভা ! এর জবাব আমার কাছে নেই।
আছে। জবাব তোমার অন্তরে, তোমার দেহে, তোমার চোখে, তোমার কর্মে- তোমার ধর্মে।
খুব কঠিন কথা। তার কৈফিয়তের আসামি আমি।
এভাবেই চলতে থাকে ইভার সাথে আমার ইমুতে কথা, ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং। সপ্তাহে বন্ধের দুদিন কথ হয়না, ছুটিতে বাড়ি যাই, স্ত্রীর কাছে থাকি। বাড়ি ফিরতেই সংসারের ঝামেলা, এটা নেই, সেটা নেই। ঝগড়াঝাটি,কেমন একটা অস্বস্তি। আর ইভা! বিপরীত মেরুতে অবস্থান। ফিরে এলেই ইভা যেসব আলোচনা শুরু করে তা আমার স্ত্রীও করেনা। স্ত্রীর সাথে কেমন রাত কাটালাম, সে সব বিষয় নিয়ে। আমি লাইন কেটে এড়িয়ে যাই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইভা- তুমি স্ত্রীর সাথে কতরাত কাটিয়েছ ! আর আমি ? কত বছর হয়ে গেল একা, স্বামি সংগ পাইনা। কী আমার অপরাধ?
ইভাকে এড়িয়ে থাকতে চাই, কিন্তু অসম্ভব। ও এখন অভিমান করে, রাগ করে । কী এক মোহনীয়তা- রাত দশটার পর আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে যায়। চারদিকে তাকিয়ে আকাশ ভরা জোছনা দেখি, নিস্তব্ধ বাড়িঘর, শেয়ালের ডাক, পাতা ঝরার শব্দ, দূরে নদির তীরে কাশফুল, জোছনা রাতে বাতাসে মাথা নাড়ে। এরি মাঝে ইভার কল আসে- চোখে পানি। আজ কী হল ওর। আমার মায়া লাগছে, কষ্ট পাচ্ছি। -কি হল তোমার কাঁদছ কেন?
বাসার ছাদে উঠে চাঁদের আলো দেখায় ইভা- দেখ ফিরোজ, কত সুন্দর দৃশ্য। মনমাতানো প্রকৃতি তোমাকে কাছে ডাকে না ? আজ আমার মাষ্টারসের পরীক্ষা শেষ হল।
-কোন বিষয়?
-দর্শন। পরীক্ষা বেশ ভাল হয়েছে। আমাকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে। আমার পরিবার পর্দানশীল, সববিষয় ম্যানেজ করে চলতে হয়। কিন্তু জীবনের দর্শন মেলাতে পারি না। বড় একা আমি।
-জীবনের পথচলা বড় কঠিন।
-এভাবে আর কতদিন? আমরা কি একবারের জন্য ও দেখা করতে পারিনা?
-ইভা। আমি শিক্ষক , আমার সংসার আছে । যদি কোন দুর্নাম হয় ,এই শিক্ষকতা পেশায়, আমার সংসারে তার কালিমা লাগবে।
জানি। তুমি নারির চেয়েও দুর্বল ? আমি চিকিৎসার কথা বলে কালই ঢাকায় আসছি। সব বাঁধা পেরোনোর পথ সমাজে আছে , ধর্মে ও আছে। তোমার সাথে কি স্বপ্নের একটা রাত কাটতে পারিনা? ভয় নেই, অন্যায় কিছু করবনা ।শুধু তোমায় দেখব, প্রাণ খুলে কথা বলব।
আমার পুরুষ মন না করতে পারেনা, শরতের কাশফুলের মত ভাললাগার একটা আমেজ অন্তরে ছড়িয়ে পড়ে ইভাকে দেখার জন্য, স্পর্শ পাওয়ার নেশায়। আকাশভরা তারার দিকে কেনা চোখ তুলে তাকাই ?
তবু, আমার চারদিক অন্ধকার, একটু ঘুম আসতেই দেখি এক দরবেশ এসে হাজির। বলছে- এ অন্যায়, ভুল। ঘুম ভেঙ্গে গেল। হুহু করে ওঠে বুকের ভেতর। রাত গভীর, ছাদে উঠতে পারিনা, ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। অন্ধকারে কাশফুল দেখা যাচ্ছে না। প্রথমেই ইমু বন্ধ করি, ম্যাসেঞ্জার অফ করি, সিমটা খুলে ফেলি।
একটা অশান্ত ঢেউ, অব্যক্ত যন্ত্রণা আমাকে তাড়া করে ফেরে। একদিন, দুদিন করে অপেক্ষা করার পর দুমাস কেটে যায় । এখনো রাতে ছাদে উঠি, শুধু ইভার সাথে কথা হয়না। শরতের সময়টা পার হয়ে যাচ্ছে। নদির তীরে এখন আর আগের মত কাশফুল ফোটেনা, কেমন বিবর্ণ হয়ে আসছে;বিবর্ণ হয়নি আমার অন্তরের জাগ্রত সেই নারি। এতদিনে ইভা ভুলে গেছে হয়ত। একটু একটু করে শীত পড়তে শুরু করে। চেয়ারটা নিয়ে ছাদে বসি । ভোরের মিষ্টি রোদে চারদিকে ঝলমল। সিমটা মোবাইলে ঢোকাই। আধা ঘণ্টা যেতেই সেই পরিচিত নম্বর, ইভার ফোন- তুমি এমন নিষ্ঠুর, পাষাণ, প্রতারক । এমন করলে কেন ? অঝোরে কান্না- ইভার চোখে,অন্তরে, সমস্ত পৃথিবীতে, কেঁপে ওঠে আমার সব সত্তা---
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার অভিনন্দন।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
মশিউর ইসলাম (বিব্রত কবি) দারুণ হয়েছে, এগিয়ে নিয়ে যান কথামালা।
ফয়জুল মহী খুব সুন্দর লেখা। মনের ভেতর থেকে গভীর ভালোবাসা জানাই।
mdmasum mia মোটামুটি ভোটের অপশনটা বেছে নিলাম।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আমাদের সব স্বপ্ন নিভে গেল। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে নিমিষেই সব শেষ- ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।

১৭ সেপ্টেম্বর - ২০২২ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

সমন্বিত স্কোর

৩.৮১

বিচারক স্কোরঃ ২.০১ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ১.৮ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪